নান্দীমুখের আন্তর্জাতিক উৎসবে চার দেশের নাটক!

বিশ্বজীৎ বড়ুয়া •

‘সাম্প্রতিক সময়ে যতগুলো দল নাট্যোৎসবের আয়োজন করেছে, প্রায় সবাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুদান পেয়েছে। শুনেছি, অনুদানের জন্য ২২টি ফাইল উঠেছিলো সভায়। ২১টি পাস হয়েছে, শুধু আমাদের নান্দীমুখের অনুদানের ফাইলটি পাস হয়নি। কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করেও পেলাম না।’ বলছিলেন চট্টগ্রামের সুপরিচিত নাটকের দল নান্দীমুখ-এর দলীয়প্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত।

আলাপকালে আক্ষেপ নিয়ে অভিজিৎ সেনগুপ্ত জানান, তিন মাস আগে বিদেশি নাটকের দলের নাটকের অনুমোদনের জন্য যথাযথ দপ্তরে আবেদন করেছিলেন। তিন মাস ঘুরতে হয়েছে। চট্টগ্রামেই আবেদন পড়েছিল ২৭টি।

পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বিভাগসহ নানা দপ্তর ঘুরে ৭ নভেম্বর অনুমোদন পেয়েছেন তাঁরা। অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, ‘আমরা এর আগেও এক বছর পরপর আন্তর্জাতিক উৎসব করতাম। কিন্তু এবার যে অভিজ্ঞতা হলো, সেটি অনেক কষ্টের। কারণ, বিদেশি নাট্যদল আনার ক্ষেত্রে অনুমতির যে নিয়ম সেটি অনেক কঠিন।’

এতো বাধাবিপত্তির পরেও থেমে থাকেনি উৎসব। নান্দীমুখের দলীয়প্রধানের ভাষায়, ‘এত কিছুর পরেও আমাদের মূল লক্ষ্য বিশ্ব নাটকের সঙ্গে বাংলা নাটকের যোগসূত্র স্থাপন এবং নতুন দর্শক তৈরি করা। আশা করি, সেটা করতে আমরা সফল হবো।’

নান্দীমুখের পথচলার ৩০ বছর উপলক্ষে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম আয়োজন ‘নান্দীমুখ আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০১৯’ ১৪ নভেম্বর শুরু হবে। চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠেয় এই উৎসব চলবে ২২’নভেম্বর পর্যন্ত।

ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘বিল্বমঙ্গল’। ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘বিল্বমঙ্গল’।

এবারের উৎসবে ভারত, ইরান, স্পেন ও বাংলাদেশের আটটি নাট্যদল তাদের আলোচিত প্রযোজনা মঞ্চস্থ করবে। এ ছাড়া ‘বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারও অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিবছরের মতো এবারও নান্দীমুখ সারা দেশের চারজন প্রতিশ্রুতিমান নাট্য নির্দেশককে নান্দীমুখ সম্মাননা প্রদান করবে।

১৪’ নভেম্বর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এই উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক নাট্যব্যক্তিত্ব লিয়াকত আলী লাকী। প্রধান অতিথি থাকবেন বিশ্ব আইটিআইয়ের সম্মানিত সভাপতি রামেন্দু মজুমদার। অতিথি থাকবেন ভারতীয় দূতাবাস, চট্টগ্রামের সহকারী হাইকমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জি ও নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী।

নান্দীমুখ-এর দলপ্রধান অভিজিৎ সেনগুপ্ত জানান, ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে উৎসব চলবে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত।

১৪ নভেম্বর আয়োজক সংগঠক নান্দীমুখ মঞ্চস্থ করবে তাঁদের বহুল প্রশংসিত প্রযোজনা ‘আমার আমি’।

১৫ নভেম্বর সকাল ১০টায় রয়েছে সেমিনার। সেমিনারের শিরোনাম ‘বাংলা রাজনৈতিক থিয়েটার ও উৎপল দত্ত’। প্রবন্ধটি উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট নাট্য গবেষক আশীষ গোস্বামী।

আলোচক হিসেবে থাকবেন কলকাতার ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক অভিক ভট্টাচার্য এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক কুন্তল বড়ুয়া।

  • ১৬ নভেম্বর তির্যক নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করবে ‘রোমিও জুলিয়েট’,
  • ১৭ নভেম্বর ভারতের আমতা পরিচয় মঞ্চস্থ করবে ‘সাবিত্রীবাঈ ফুলে’,
  • ১৮ নভেম্বর সবারপথ ‘ত্রিনয়নী’,
  • ১৯ নভেম্বর স্পেনের মুন প্যালেস মঞ্চস্থ করবে ‘ডিলেমাস উইথ মাই ফ্লামেনকো টেইলকোট’,
  • ২০ নভেম্বর ভারতের চাকদহ নাট্যজন মঞ্চস্থ করবে ‘বিল্বমঙ্গল’।
  • ২১ নভেম্বর ইরানের ক্রেজি বডি গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে ‘মিস্টিরিয়াস গিফ্‌ট’
  • এবং ২২ নভেম্বর ভারতের জ্যোতি ডোগরা গ্রুপ মঞ্চস্থ করবে ‘ব্ল্যাক হোল’।

অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলেন, বিদ্রোহের কথা, বিপ্লবের গান, মুক্তিযুদ্ধের কথা, স্বাধিকার আন্দোলনের কথা, মানবিকতার কথা, অসম্প্রদায়িক চেতনার কথা নাটকের মাধ্যমে শিল্পসম্মতভাবে প্রকাশ করতে আগ্রহী তাঁরা। সেই কথা বলার ভাবনা নিয়ে নান্দীমুখ। ১৯৯০ সালের ১৬ নভেম্বর যাত্রা করে এ যাবৎ ১৪টি প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে নান্দীমুখ।

এক হাজারের মতো মঞ্চায়ন করেছে এই দল। নান্দীমুখ আলোচিত প্রযোজনার মধ্যে আছে ‘অন ডিউটি’, ‘জ্বালা’, ‘অলকানন্দার পুত্রকন্যা’, ‘সংবাদ কার্টুন’, ‘লাল লণ্ঠন’, ‘ক্রান্তিকাল’, ‘অর্ফিয়ুস’, ‘বেলা শেষের গল্প’, ‘ঊর্ণাজাল’, ‘খেঁকশিয়াল’ ইত্যাদি।